বর্ণালী
ইদানীং রোগটা দেখা দিয়েছে সুস্নাতর। আচমকা অপরিচিত
কাউকে দেখে পরিচিত কারও সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া।
দু'দিন আগেই বাসে বাড়ি ফেরার পথে শ্যামলা, নীল জিনস
পরা, বাদামি রঙয়ের ভ্যানিটি ব্যাগওয়ালা একজনকে দেখে অদিতি ভেবে বসেছিল। জিজ্ঞাসা করেও
ফেলতো হয়তো। কী ভেবে থেমে গেল। যাক, সে যাত্রা রক্ষা।
আজও এমন কাণ্ড। সাদা-কালো চেক জামা পরা এক ভদ্রলোককে,
'কীরে বিতান?' বলে ডেকে ফেলেছিল। ভদ্রলোক মুখ তুলে তাকাতেই চুপসে গেল সে। 'ওহ, সরি।
কিছু মনে করবেন না। আপনাকে আসলে...'। ততক্ষণে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন ভদ্রলোক। একটা ব্যর্থতার
লজ্জা ঘিরে ধরেছিল তাকে। ছোটবেলায় এমন অনেকবার হয়েছে। ফুলটস বল, চালাতে গিয়ে বোল্ড!
অফিসেও রোগটার কথা লোকে জানতে পেরেছে। অবশ্য, নামেই
অফিস। আসলে মারোয়ারি গদি। মোটা জিভের উচ্চারণে সে শুধুই, সুসান'দা বা সুসান। একটু আধটু
ফিসফাস করে কলিগরা। তাপস শুধু বলেছে, 'একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিন দাদা। আমার চেনা আছে
এ লাইনে।'
তাপস ওরই মতো। পথ ভুল করে এসব পেশায় চলে এসেছে। বয়স
কম। টেস্টও আছে ছোকরার। তা ও যতই বলুক, রোগ থেকে বেরোতে চায় না সুস্নাত। এমন ভাবনা
আসলে আসুক না। এত অপরিচিতের মাঝে, পরিচিত লোক দেখতে পেলে ক্ষতি কী? ইলিউশন হলে হোক
না! তবে রোগটা বাড়ছে, তা নিয়ে এক-আধবার ভয়ও পায়।
আজকাল, নিজের একসময়ের ধ্যানধারণাগুলো তার ভাঙছে। যেমন
ভেঙে গেল বিয়েটা। অল্পস্বল্প বেপরোয়া জীবনে একসময় পুলিশ-মিলিটারিকে পাত্তা দিত না।
কলেজে পড়ার সময় বুকে বারুদ লুকিয়ে ঘোরা। অবশ্য, ধরা পড়েনি তাই। সেটা হলে কী হতো? উত্তর
জানে না সুস্নাত।
এখন অবশ্য
পুলিশকে না হলেও মিলিটারিকে একটু আধটু শ্রদ্ধা-ভক্তি করে। হাজার হোক দেশের দুশমনকে
তো ওরা ঠেকায়। 'ওরাই গুলি খেয়ে মরে, শান্তিতে ঘুমোই আমরা। পুরোনো আড্ডায় গেলে ভারত-পাকিস্তান
নিয়ে এমন জাতীয়তাবাদী গন্ধওয়ালা মন্তব্যও করে ফেলে আজকাল। সেদিন যেমন বলে ফেলল, 'আমরা
না হয় শান্তির কথা ভাবছি, ওরা কি ভাবছে? পালটা মার দিলে ক্ষতি কী?'
বৈদ্য অবাক হয়ে ওর দিকে দেখল। ও একসময় খানিকড়া এগিয়ে
গিয়েছিল। কিন্তু বাঁধা পড়ে যায় নানা বাঁধনে। তবে এখনও তেজ মরেনি। সম্রাট অবশ্য সেদিন
সুস্নাতকে পাশে পেয়ে চাঙ্গা হয়ে গেল। আড্ডায় লিবারেলদের কাছে ও বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল।
নিজেকে কেমন যেন প্রিজম মনে হয় ওর। মনে হয়, বয়স যত
বাড়ছে, ততই বাইরের সাদা, আসলে ভিতর থেকে নানা রঙ হয়ে বেরোচ্ছে।
No comments:
Post a Comment