বিদ্যাসাগর: অভিজিৎ সরকার


বিদ্যাসাগর: আদি ব্রাহ্মণ, প্রোটেস্টান্ট এবং আধুনিক

বর্তমান প্রবন্ধে উনিশ শতকের বাঙলার নবজাগরণের অগ্রগণ্য পুরুষ বিদ্যাসাগরের কর্ম ও চেতনার নানা মাত্রাগুলি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এই বিশ্বাসের ভিত্তিভূমি থেকে যে বিদ্যসাগরের পরিবর্তনপন্থার ধরণটা বেশ অন্যরকমতিনি আর পাঁচজন নবজাগরণ পুরুষের মতো ঐতিহ্য কে অস্বীকার করা, আধুনিকতাকে অস্বীকার করা বা এদের যে কোন একটাকে আঁকড়ে ধরা,  এই প্রচলিত বাঙালী নবজাগরণ-চিন্তাবৃত্তের বাইরে একটা নিজস্ব ঘরানা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাঁর মেজাজের মধ্যে সমান প্রশ্রয় পেয়েছিল, ভারতীয় শাস্ত্র, ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সমাজ ও তার রীত-রেওয়াজ যার একটা শাস্ত্রগত ভিত্তি ভূমি ছিল; উল্টোদিকে নতুন বেড়ে ওঠা নাগরিক মননশীলতা, যার মধ্যে ছিল পাশ্চাত্যের মানব ও সমাজ কেন্দ্রীক চিন্তাভাবনার আধুনিক রকমগুলি। বিদ্যাসাগর, অন্যান্য নবজাগরণ পুরুষ মধু-বঙ্কিম-বিবেকের থেকে অনেকটা আলাদা, বরং তাঁর বেশি মিল ঈষৎ পরবর্তী রবীন্দ্রনাথ এবং গান্ধীর সঙ্গে। তাঁদের মতোই ভারতীয় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে নতুন পথের অন্বেষণ বিদ্যাসাগরের চিন্তাচেতনাতে বড় জায়গা করে নিয়েছিল। কলকাতাকে ভিত্তি করে তিনি পরিচালনা করেছেন তাঁর কাজকর্ম, কিন্তু তাঁর কাজের, সংস্কারের লক্ষ্য সেকালের আর সবার মতো নাগরিক সমাজ নয়, বরং সংস্কারের লক্ষ্য বাঙলার গ্রামগুলি। তিনি সে যুগের সব মনিষীর প্রধান বিশ্বাসের জায়গাটা অর্থাৎ ধর্মকে নিজ কর্মকান্ডের অশেপাশে মোটেই দাঁড়ানোর জায়গা দিলেন না, এ জিনিসটা সে যুগে সর্বৈব নতুন। এসবই এক আশ্চর্য আধুনিকতার দ্যোতক। যখন তিনি ঐতিহ্যর পুরোধা, তখন তাঁর মধ্যে আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণকে দেখি, সৎ, ব্রহ্মপরায়ণ, প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্যের প্রতিমূর্তি, সমাজ ও লোকহিত যাঁর অন্বিষ্ট তাই তিনি আদি ব্রাহ্মণঅন্যদিকে যে মুহূর্তে শাস্ত্র সামাজিক আচারের মরুভূমিতে গতি হারাচ্ছে, সেই মূহুর্তে তিনি বেজে উঠছেন, প্রতিবাদে, প্রতিরোধে; অথচ শাস্ত্র থেকেই সংগ্রহ করে নিচ্ছেন প্রতিবাদের রসদ। এখানটাতে পঞ্চদশ শতকের মার্টিন লুথারের ছায়া তাঁর মধ্যে, যে লুথার ক্যাথলিক ধর্মের গোঁড়ামী ও আচার সর্বস্বতার বিরুদ্ধে খ্রীষ্টধর্মের মানবিক নীতি-আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পোপের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন--- জন্ম হয়েছিল প্রোটেস্টান্ট খ্রীষ্টধর্মেরএই সূত্রেই শীর্ষনামে আদি ব্রাহ্মণ, প্রটেস্টান্ট এবং আধুনিকশব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে।

নবিংশ শতক বাঙালীর ইতিহাসের একটা যুগ সন্ধিক্ষণ, একদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও প্রশাসনের হাত ধরে বিদেশী হাওয়ার অনুপ্রবেশ, অন্যদিকে দেশীয় ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার এই দুই ঝড় পুরোনোকে অনেকটাই লন্ডভন্ড করে দিল, যদিও প্রতি-সংস্কার নিজের মতো করে ক্রীয়াশীল থাকে কারণ সব কিছুর সমূল উৎপাটন সম্ভব ছিল না। আর ছিল সংস্কারকদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা, যে কারণে রামমোহন বিলাত যাত্রার সময় সঙ্গে ব্ৰাহ্মণ পাচক নিয়ে যান অথবা কেশবচন্দ্র নিজেরই উদ্যোগে প্রণীত সিভিল ম্যারেজ সম্পর্কিত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেন কোচবিহারের রাজপরিবারে। উল্টো দিকে ছিল একাংশের অতিসক্রিয়তা, যার জেরে ইয়ংবেঙ্গলীরা যাবতীয় গুণাবলী সত্ত্বেও হয়ে উঠলো সমাজের মাথাব্যাথার কারণ, এমনকি শেষাবধি সমাজচ্যুত ! অনেকে এমনকি এদের পলায়নবাদী বলারও পক্ষপাতী, রামমোহন পালালেন সনাতন হিন্দুধর্ম থেকে নিজের একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম ধর্মে, আর সেই সঙ্গে তার অগণিত ব্রাহ্ম অনুগামী, যার মধ্যে ছিলেন বাঙলার শিক্ষিত অগ্রবর্তী মধ্যশ্রেণীর একটা বড় অংশ; আবার ইয়ংবেঙ্গল আশ্রয় নিল প্রায় সৃষ্টিছাড়া কাজকর্মের পক্ষপুটে। অন্য একটা দিকেও এই সংস্কারকরা কমবেশি আটকে গেলেন একটি বড় ঘেরাটোপে; এই ঘেরাটোপটা নির্মিত হল এদের সামাজিক অবস্থান ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে, বঙ্কিম বা মধু ছিলেন জমিদার তনয়; জমি ও চাকুরীর কল্যাণে বিত্তশালী, মধু পারিবারিক হিন্দু ঐতিহ্যের তোয়াক্কা করেন না, পাশ্চত্যের ভালো-মন্দ সবই তিনি আত্মস্থ করেন নির্বিশেষে, এমনকি প্রবল মদ্যপান ও বিলাসীতাও। বঙ্কিম ইংরাজী শিক্ষিত, পাশ্চত্যের দর্শন গুলে খেয়েছেন, আবার ভাটাপাড়ার ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির পারিবারিক ঐতিহ্য আশ্রিত, এরা কম বেশি শহুরেকায়স্থ বিবেকানন্দ একদিকে শহুরে, পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত অথচ পিতার ভাগ্য বিড়ম্বনার কারণে অর্থ-বিত্ত হীন, তার আবার প্রাণের টান গেঁয়ো রামকৃষ্ণে, হিন্দুধর্মেএক দল আবার আঁকড়ে ধরলো পুরোদস্তুর দেশীয় ঐতিহ্য আর ধর্ম; রাধাকান্ত দেব এবং কিছু ব্যাতিক্রম ধর্মীতা সত্ত্বেও ভূদেব মুখোপাধ্যায়। এই সব, এই সমস্ত পরস্পরবিরোধীতা একটা ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি করে যা বাংলার নবজাগরণ ও তার চরিত্র কে করে তুলেছে অস্পষ্ট, ধোঁয়াশাময়।

এই ধোঁয়াশাটির আড়াল-আবডাল থেকে নবজাগরণকে বুঝতে গেলে একটা প্রয়োজনীয় মাইলফলক হতে পারেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। মানুষটি একটু বেখাপ্পা, তাঁর দর্শনটা ঠিক উনিশ শতকের বাঙালী মধ্যবিত্ত সুলভ বিদ্যাচর্চা অথবা নরম সংস্কারবাদ দিয়ে বোঝা যাবে না তিনি তাঁর চিন্তা-চেতনা অথবা কর্মপ্রেরণার সঙ্গে মেলাতে চেয়েছিলেন লোকপ্রজ্ঞাকে, যা বাস্তবায়িত করার মানসে তিনি মানবিক উপাদানগুলিকে দর্শন ও কর্মের পুরোভাগে প্রতিষ্ঠা করেন। এব্যাপারে তাঁর মিল দেখি অষ্টাদশ শতকের কমন সেন্স' ফিলোসফির প্রবক্তা টমাস রীড বা ডুগান্ড স্টুয়ার্ট প্রমুখ স্কটিশ দার্শনিকেরতবে এও ঠিক কমন সেন্স যেখানে অন্ধ দেশাচারের দ্বারা আচ্ছন্ন, সেখানে তিনি যুক্তি দিয়ে তার গ্রহণযোগ্যতা বিচার করাটাকে বোধি বলে জেনেছিলেন। এই পটভূমি আসলে গড়ে উঠেছিলো, উনিশ শতকের বাঙালী মধ্যবিত্তের অধিকাংশের তুলনায়, তার অতি সামান্য পারিবারিক ও আর্থিক পটভূমিকায়, এমনকি তাঁর শিক্ষা-দীক্ষাও তো প্রায় দ্বিতীয় শ্রেণীর সংস্কৃততে, সেকালের মানে প্রথম ও প্রগতিশীল শ্রেণীর ইংরাজীতে নয় (১)বস্তুত উনবিংশ শতকের মনিষীদের যে মধু-বঙ্কিম ছাঁচ, তিনি তার থেকে অনেকটা আলাদা অথচ এই সময়েই তাঁর গতায়াত, তাঁর সঙ্গে বরং বেশি মিল আমি দেখি কিছু পরের রবীন্দ্রনাথ অথবা মহাত্মা গান্ধীর, যদিও রবীন্দ্রনাথের মতো বিরল সর্বপ্লাবি প্রতিভাধর তিনি নন, আবার গান্ধীর রাজনৈতিক বা দার্শনিক প্রজ্ঞাও তার মধ্যে দেখি না। মিলের জায়গাটা আমার মতে এরা প্রত্যেকেই তাদের নিজের সময়ে তাদের মতো করে দেশীয় ঐতিহ্য ও পাশ্চত্য ভাবধারাকে মেলানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও গান্ধী বা রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রটা অনেক বিশাল, তারা মূলত ও প্রধানত ভারত, প্রাচ্য অথবা কখনোও এমনকি বিশ্বসভ্যতার নিরিখটিকে প্রধান্য দিয়েছেন। বিদ্যাসাগরের ক্ষেত্রটা একটু ছোট, বাংলা এবং বাংলাতবে তখনোও ভারত কল্পনাটা জাতীয়তাবাদের যুগের মতো রূপ পায়নি, একথাটাও মনে রাখবো। রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী দুজনে শহুরে হলেও চিন্তাভাবনায় গ্রাম হিত বা গ্রাম গঠনকে বড় জায়গা দিয়েছেন। শ্ৰীনিকেতন, শান্তিনিকেতন বা গান্ধীর ক্ষেত্রে সবরমতী বা সেবাগ্রামে ফলিত ব্যবস্থাপনা এর স্বাক্ষ্য বহন করছে; অন্য সূক্ষ ও জটিল জিনিস গুলো না হয় নাই বললাম। এদের মেজাজটা কিন্তু বাধা আছে পরিশীলিত নাগরিকতার সঙ্গে। বিদ্যাসাগরকে আমরা ঠিক এখানটাতে পাবো, জন্ম গ্রামে, পোশাক-আশাক বেশভূষাতে কোনভাবেই নাগরিক নন, স্মরণীয় গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের ড্রেস কোডঅথচ মেজাজের বিচারে ষোল আনার জায়গায় আঠেরো আনা আধুনিক, সংস্কৃত পন্ডিত হয়েও প্রয়োজনে ইংরাজীর গুণগ্রাহী, পুরোনো শাস্ত্রবাক্যকে আধুনিকতার সঙ্গে অন্বিত না করে গ্রহণ বা বর্জন করার কথা ভাবতে পারেন নাশাস্ত্রীয় অচলয়াতনটাকে ভাঙার জন্য নিজের সংস্কৃত কলেজে ইংরাজী ভাষা, পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানের পাঠদানে অত্যুৎসাহীবিধবা বিবাহ বা বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহর মত বস্তাপচা গ্রাম্যতা সেকালের তাবড় নাগরিকদের উপেক্ষা বা সন্মতি পেয়ে এসেছে একথা
আমরা জানি। এরা বিদ্যাসাগরের প্রত্যক্ষ বিরোধীতাতেও নেমে এসেছিলেন, তাও আমাদের অজানা নয়। মোদ্দা কথা পরিশীলিত নাগরিক আধুনিকতা বোধহয় তাঁর সময়ে এমনটা আর কারুর ব্যক্তিত্বে প্রতিফলিত হয়নি। বিদ্যাসাগরের সংস্কারের দুটি প্রধান মাত্রা; শিক্ষা সংস্কার বিশেষত স্ত্রী শিক্ষা আর বিধবা বিবাহের মতো সমাজ সংস্কার। বলাবাহুল্য এই লক্ষ্যবস্তু দুটি যতটা গ্রাম সমাজের সঙ্গে জড়িত ততটা শহুরে নয়, তবে এটাও কিন্তু ভুললে চলবে না, যে কলকাতাকে কেন্দ্র করে উনিশ শতকীয় নবজাগরণের বিস্তার তা কিন্তু তখনোও বেশ গ্রাম লক্ষণাক্রান্ত, কলকাতার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে সতীদাহের প্রাবল্য আমাদের অজানা নয়, উনিশ শতকীয় কলকাতায় হিন্দু কলেজ বা দু-চারটে মিশনারী স্কুল কলেজ গড়ে উঠেছে বটে কিন্তু নগরের সব লক্ষণ বা নাগরিক পরিশীলতার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ নগণ্য। বস্তুত তাঁর সংস্কার মূলত গ্রামসমাজ অভিমুখী প্রসঙ্গত রমাকান্ত চক্রবর্ত্তী মহাশয় উদ্ধৃত করছেন প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্যের লেখা থেকে: যে বিদ্যাসাগর এনলাইটেনমেন্ট-এর ভাবধারায় এত সম্পৃক্ত আর সিভিল সোসাইটি বা পৌর সমাজের চৌহদ্দিতেও যিনি এত কিছু করেছেন, সেই মানুষেরই কৌমের এলাকায় কাজ, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক অর্থে, হয়তো সবচেয়ে তাংপর্যময়... তাঁর সমস্ত উদ্যেগের কেন্দ্র ছিল ঐ বেসরকারী সমাজ। ঐ কৌম... বিদ্যাসাগর সদরে রিপোর্ট করেছেন বারবার, কিন্তু করেছেন মফস্বলের হয়ে। (২)

বিষয়ের সত্যতা অন্বেষণের জন্য জন্য একটু তলিয়ে দেখা যাক তাঁর সংস্কারগুলিকেবিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ রূপে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশিষ্টতা অর্জন করলেও, তাঁর শিক্ষা প্রকল্প অনেক বেশি জনমুখী ছিল, বিশেষ বিদ্যালয় পরিদর্শক রূপে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামাঞ্চলের মডেল স্কুলগুলি এর স্বাক্ষ্য বহন করেঅবশ্য বাস্তববাদ ছিল তাঁর মজ্জায়, যে কারণে তিনি স্পষ্টত বুঝতে পেরেছিলেন উনিশ শতকের ঐ পেছিয়ে থাকা সময়টাতে সত্যিকারের জনমুখী শিক্ষা কতটা সম্ভব ছিল ? বস্তুত বিনয় ঘোষ বা বদরুদ্দীন উমর উভয়েই বাঙলার ছোটলাট গ্র্যান্টের কাছে পাঠানো তার একটি পত্রের নমুনা তুলে ধরে দেখানোর প্রয়াস পেয়েছেন যে বিদ্যাসাগর শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেণী চেতনার উর্দ্ধে উঠতে পারেননি (৩) একইভাবে অনেকে মহিলাদের জন্য তার শিক্ষক শিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতার কথা বলেন এটা ঠিকই যে বিদ্যাসাগর আদি বাঙালী সংস্কারকরা আমরা মার্কসীয় আলোতে যেটাকে শ্রেণী বলি তার ওপরে উঠতে পারেননি, অনেকসময়। কিন্ত সামগ্রীক ভাবে তিনি জনশিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন না, এমন সমীকরনটাও ঠিক নয়জনশিক্ষা সম্পর্কে তার উদ্যেগহীনতার ব্যাখা এটাও হতে পারে যে, তিনি ছোটলাট গ্র্যান্টকে যখন পরামর্শ দিচ্ছেন তা মূলত শিক্ষা খাতে সরকারী অর্থের ব্যবস্থাপনা নিয়ে, তার মনে হয়ে হয়েছিল নামমাত্র বেতনে কেউ গ্রামাঞ্চলে শিক্ষকতার দায়িত্ব নেবেনাতৎসহ তখন উচ্চবর্গের মানুষের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে সচেতনতার অভাব ছিল, সেই অবস্থায় নিম্ন শ্রেণীর মানুষ কতটা শিক্ষা নেওয়ার জন্য তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবে তা সন্দেহেরই বিষয় এই আধুনিক যুগেও তো আর্থিক সক্ষমতাহীন মানুষ তার সন্তানকে উপর্জনক্ষম হলেই রুজিরুটির ধান্দায় পাঠায়, বিদ্যালয়ে নয়। আর মহিলাদের জন্য শিক্ষক শিক্ষণে তার বিরোধীতার জায়গাটা ছিল অন্য, তিনি গ্রাম সমাজের রক্ষণশীলতা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, ফলত তার ধারণা হয় মেয়েরা শিক্ষয়ত্রীর চাকুরী করতে আসবে না পারিবারিক বাধার কারণে এই অবস্থায় তাদের জন্য শিক্ষক শিক্ষণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা কেবলমাত্র অর্থের অপচয় ভিন্ন কিছু হবে না। মনে রাখতে হবে দেশীয় সমাজ, তার কুসংস্কার, নারীদের সম্পর্কে সমাজের বঙ্কিম দৃষ্টি এসবের একেবারে ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা সমসময়ে তার মতো আর কারোর ছিলো নাপাশাপাশি যদি রাখি তার শিক্ষা কর্মসূচী তাহলে একটা জিনিস অন্তত স্পষ্টতই বোঝা যাবে যে, গ্রামাঞ্চলে একাধিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিশেষত মেয়েদের বিদ্যালয় এবং শিক্ষক শিক্ষণের ব্যবস্থায় উদ্যেগী হয়ে আসলে জনশিক্ষা বিস্তারের ভিত্তিটাকেই দৃঢ়মূল করলেন, পরবর্তীকালে এই ভিতটাকে কাজে লাগিয়েই তো সব শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষার প্রসারের কাজটা সহজ হল তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলির পাঠ্য তালিকায় থাকলো দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল; ইংরাজী, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত পদার্থবিদ্যা, গ্ৰহতত্ত্ব ইত্যাদিলক্ষ্যণিয় এই পাঠ্যসূচীর পূর্ণাঙ্গতা, তিনি নিজে কিন্তু সংস্কৃতের পন্ডিত এরকমটা খুবই সম্ভব ছিল তিনি দেশীয় ঐতিহ্যের ধূজা ধরতে যেয়ে আধুনিকতার মাথায় বাড়ি বসিয়ে দিতে পারতেন। যেমনটা সেই সময়ের দেশীয় পন্ডিতরা করেছেন আকছারই। তিনি এদের সম্পর্কে নিজেই লিখে গেছেন, “বহুকাল সঞ্চিত কুসংস্কার দূর করা অসম্ভব। শাস্ত্রে যাহার অঙ্কুর আছে, এমন কোন বৈঞ্জানিক সত্যের কথা শুনিলে, সেই সত্য সম্বন্ধে শ্রদ্ধা দেখান দূরে থাক, শাস্ত্রের প্রতি তাহাদের কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাস আরও দৃঢ়ীভূত হয় এবং আমাদের জয়, এই ভাব ফুটিয়া ওঠে(৪)সংস্কৃত কলেজে ইংরাজী ভাষা, গণিত, ইতিহাস, অর্থনীতির মত আধুনিক বিষয়ের পাঠদান তারই উদ্যোগের ফল প্রসঙ্গত তাঁর Notes on the Sanskrit College, 12 April, 1852-র দিকে তাকালে দেখবো শিক্ষাক্ষেত্রে এযাবৎ চলে আসা আদর্শ ও বাবহারের বিপ্রতীপে তার দৃঢ় অবস্থানটিএতে মোট ২৬ ধরণের সুপারিশ করা হয়েছিল, সংস্কৃত কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যতালিকা পরিবর্তনের লক্ষ্যে তার দু-একটির উল্লেখেই দেশীয় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণে গড়ে ওঠা বিদ্যাসাগরীয় প্রগতিশীলতার একটা রূপরেখা পাওয়া যেতে পারে। তিনি পরিস্কার বললেন, লীলাবতী ও বীজগণিত, যা প্রচলিত পাঠ্য তালিকায় ছিল, তা যথেষ্ট প্রহেলিকাময় এবং গণিতের পঠনপাঠন অবশ্যই ইংরাজী মাধ্যমে হবে। সংস্কৃত কলেজের ছাত্রদের ব্যকরণ ও সাহিত্য শ্রেণীতে পড়বার সময় তিনভাগের দু ভাগ সময় সংস্কৃতের জন্য ও একভাগ সময় ইংরাজীর জন্য দেওয়া উচিত। অলঙ্কার, স্মৃতি ও দর্শন শ্রেণিতে পড়ার সময় তাদের প্রধান মনোযোগের বিষয় হবে ইংরাজী। অর্থাৎ তিনভাগের দুইভাগ সময় ইংরাজী বিদ্যার জন্য নিয়োগ করা উচিৎ। তিনি আরও বললেন, সমস্ত রকম দর্শন ছাত্রদের পড়তে বলার উদ্দেশ্য হল, সেগুলি পড়লে তারা দেখতে পাবে কিভাবে এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের মতবাদ খন্ডন করেছে বা ভুলভ্রান্তিগুলি চিহ্নিত করেছেসুতরাং সব মতের দর্শন পাঠ করলে ছাত্রদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী ও মতামত গড়ে উঠবে (৫)সংস্কৃত কলেজের ছাত্রদের সহজে সংস্কৃত শেখানোর জন্য যেমন তিনি নিজেই লেখলেন উপক্রমণিকা ও ব্যকরণ কৌমুদী, তেমনই পাশচাত্য জ্ঞানবিঞ্জানের সহজ শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে সৃষ্টি করলেন বাঙলা গদ্য। তার বর্ণ পরিচয়ের ওপর তো দাঁড়িয়ে আছে বাঙালীর বাংলা শিক্ষার বুনিয়াদটাই। অমলেশ ত্রিপাঠী সঙ্গত ভাবেই মন্তব্য করেছেন, মেকলে প্রবর্তিত শিক্ষা জনগণের মধ্যে পরিশ্রুত হয়নি, কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র সৃষ্ট বাংলা গদ্য জনশিক্ষার বাহন হয়ে দাঁড়ালো (৬)আরও একধাপ এগিয়ে তিনি জীবনপাত করলেন, নারী শিক্ষা বিস্তারে; ১৮৫৭ থেকে এব্যপারে সরকারী সাহায্য লাভের নিরলস বিদ্যাসাগরীয় প্রয়াসটি লক্ষ্যণীয় সরকারী অনুমোদনের পরোয়া না করে প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক মেয়েদের বিদ্যালয় এগুলির অনুমোদন নিয়ে সরকারের সঙ্গে তার মতানৈক্যের জেরে তাকে এমনকি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছাড়তে হয়। অসঙ্গত নয়, রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত উক্তি, “...সেই বড় যুগে তাঁর জন্ম, যার মধ্য আধুনিক কালেরও স্থান আছে, যা ভাবী কালকে প্রত্যাখান করেনা যে গঙ্গা মরে গেছে তার মধ্যে স্রোত নেই, কিন্তু ডোবা আছেবহমান গঙ্গা তার থেকে সরে এসেছে, সমুদ্রের সঙ্গে তার যোগ এই গঙ্গাকেই বলি আধুনিক। বহমান কালগঙ্গার সঙ্গেই বিদ্যাসাগরের জীবন ধারার মিল ছিল, এইজন্য বিদ্যাসাগর ছিলেন আধুনিক... (৭)
রামমোহন যখন সতীদাহ প্রথা রদের আন্দোলন করছেন, তখন তার প্রায় সবটাই সরকারী সমর্থন নির্ভর। শাস্ত্রবাক্য বা সমাজের কাছে সেটাকে গ্রহণীয় করার বিষয়টা খুব প্রাধান্য পেলনা। মনে রাখবো বৃটিশ বিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৮৫৭-র পেছনে যে দু-একটি অন্তঃসলিলা কারণ বড় কাজ করেছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, তার একটা ছিল, বৃটিশ সরকার কতৃক দেশীয় ঐতিহ্য ও সমাজ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, যার প্রকাশটি দেখা গিয়েছিল সতীদাহ বিরোধী আইন পাশ ইত্যাদী ঘটনায়এই নজিরটি প্রখর বাস্তববাদী বিদ্যাসাগর নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিলেন। যে কারণে তিনি সরকারের ভূমিকা কি হবে, এই চিন্তার তোয়াক্কা না করে মূলটা ধরতে চাইলেন অর্থাৎ অন্ধ শাস্ত্রনির্ভর সমাজকে আগে তাদের নিজেদের অস্ত্রেই ঘায়েল কর। শাস্ত্রবাক্যকে হাতিয়ার করে বিধবা বিবাহের সপক্ষে শাস্ত্রের সদর্থক বয়ান খুঁজে বার কর, অতঃপর জনমত সংগ্রহ করে সরকারের পদক্ষেপের পেছনে একটা শক্ত দেশীয় ভিত তৈরী করে দাও। প্রাচীনতম স্মৃতি গ্রন্থ পরাশর সংহিতার একটি শ্লোক কিভাবে বিধবা বিবাহের পেছনে শাস্ত্রীয় সমর্থনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা বহুল আলোচিত। অতঃপর অন্ত্যন্ত নিপূনতার সঙ্গে তিনি প্রচার শুরু করলেন-- রচনা করা হল একাধিক প্রচার পুস্তিকা, বিরোধীদের আহ্বান করা হল তর্কে, জনসমর্থনের প্রমাণ রূপে সংগ্রহ করা হল গণস্বাক্ষর; এইভাবে সরকারের আইন প্রণয়নের কাজটিকে করে দেওয়া হল নৈতিক ও গণভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আইনটা পাশ করিয়ে ক্ষান্ত হলেও আবার তাঁর চলবে না, আইনের বাস্তব প্রয়োগ যাতে জনপ্রিয়তা পায় তার জন্য নিজের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিলেন এক বালবিধবার আমাদের দেশে যেখানে এটাই দস্তুর যে, বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণীর ওপর আইন বা কোন ব্যবস্থার প্রয়োগটা তার নিজের খেয়ালখুশীর ওপর নির্ভর করে; শুরুতেই এ প্রসঙ্গে কেশবচন্দ্রের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে এই ব্যাতিক্রমধর্মীতাটাই বিদ্যাসাগরের প্রধান আবেদনআরেকটি অভীষ্ট সমাজসংস্করের ব্যাপারে সাফল্য অবশ্য তাঁর করায়ত্ত্ব হয়নি--- বহুবিবাহযদিও এক্ষেত্রেও তিনি জীবনের এক বড় সময় ব্যায় করেছেন--- লেখেছেন একাধিক পুস্তিকা ‘বহু বিবাহ রহিত হওয়া উচিৎ কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার’ এক (১৮৭১) এবং দুই (১৮৭৩)। বাল্যবিবাহের সংকট ও তার থেকে বাঙলার নারীদের রক্ষাকবচ দেওয়ার জন্যেও তাঁর উদ্যেগের অভাব ছিল না। সহবাস সন্মতি আইন যা ১৮৬০-এ পাশ হয়েছিল, তার অনত্যম মস্তিস্ক ছিলেন বিদ্যাসাগর। পরবর্তীতে এই আইনটি যখন সংশোধন হয়, তখন তিনি বয়সের পরিবর্তে বালিকাদের রজঃদর্শনের ওপর জোর দেননিজের মেয়েদেরও তিনি ষোল বছরের আগে বিয়ে দেননি (৮)আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও” --এই বাঙলা আপ্তবাক্য বোধহয় তাঁকে সামনে রেখেই তৈরী হয়েছিল। এটা আধুনিকতার এক অনন্য সাধারন মাপকাঠিও বটে।

এই আধুনিকতা ,যা আত্মস্থ রেখেছে ঐতিহ্যকেও, যেটা বিদ্যাসাগরীয় আধুনিকতার একটা বড় দ্যেতক, এর আরও প্রকৃষ্ট প্রমাণ সমাজ-ধর্ম ও রাজনীতি সম্পর্কিত তার ধারণায়, যা আরও বেশি করে অর্থবহ হয় পিছিয়ে পড়া মানুষ সম্পর্কে তার বোধির ঘরে প্রজ্জ্বলিত প্রকোষ্ঠটির জাজ্জ্বল্যমানতায়। পরিস্কার ভাবে তাঁর মনে হয়ে ছিল, বাঙালী বুদ্ধজীবি ভাবের ঘরে চুরী করে। চাইলেই তিনি জমি কিনে নব্য ভূস্বামী শ্রেণির অংশ হয়ে উঠতে পারতেন, সেই আর্থিক সক্ষমতা তাঁর ছিল; বর্ধমানের মহারাজা নাকি তাঁকে বীরসিংহ গ্রামের পত্তনী দিতে চেয়েছিলেন, তিনি তা প্রত্যাখান করেন। ব্যঙ্গোক্তি করে তাকে বলতে শুনি, “বাঙ্গলার নিম্ন শ্রেণীর আবার উন্নতি হইবে ? যাহাদের আমরা পশুর মতো জ্ঞান করি--- স্বার্থসাধনের উপায় রূপে মনে করি, তাহাদিগের আবার গতি ফিরিবে ? সাহেবরা আমাদের ঘৃণা করে বলিয়া আমরা কত আক্ষেপ করিয়া থাকি, কিন্তু আমরা নিম্নশ্রণীকে পশু অপেক্ষাও ঘৃণার চোখে দেখিঅথবা কংগ্রেসে যোগদান করার আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি—‘বাবুরা কংগ্রেস করিতেছেন আন্দোলন করিতেছেন, আস্ফালন করিতেছেন। দেশের সহস্র লোক অনাহারে প্রতিদিন মরিতেছে তাহার দিকে কেহই দেখিতেছেন না” (৯)সম্ভবত এই প্রতীতিই তাকে পরবর্তী কালে বাধ্য করছিল, কলকাতার ভদ্রজনকে ছেড়ে সুদূর সাঁওতাল পরগণায় প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে নির্বাসন নিতেউনবিংশ শতকে গ্রাম্য বামুন বাড়ির ছেলে হয়েও, সংস্কৃত শিক্ষায় শিক্ষিত বা সংস্কৃত কলেজের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও ধর্মকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতেও তো তাঁর মতো আর কাউকে দেখি না। তিনি ধর্ম সন্মন্ধে তাঁর জীবনিকার চন্ডীচরণ বন্দ্যেপাধ্যায়কে একবার বলেছিলেন, “ নানাপ্রকার মতভেদ নিবন্ধন যখন অপ্রিয় সঙ্ঘটন হইতে লাগিল, তখন আর সেই সকল গোলযোগের মধ্যে থাকিয়া অশান্তি বৃদ্ধি করিতে আমার প্রবৃত্তি হইল না। ব্যক্তিগত মতভিন্নতার অত্যধিক প্রবলতা দেখিয়া আমি আস্তে আস্তে বিদায় লইলাম। এ দুনিয়ার একজন মালিক আছেন তা বেশ বুঝি, তবে ঐ পথে না চলিয়া এ পথে চলিলে, নিশ্চয় তাঁহার প্রিয়পাত্র হইব, স্বর্গরাজ্য অধিকার করিব, এ সকল বুঝিও না, আর লোককে তাহা বুঝাইবার চেষ্টাও করি না। লোককে বুঝাইয়া শেষটা কি ফ্যাসাদে পড়িয়া যাইব... পরের জন্য বেত খাইয়া মরিব ?”(১০) শোনা যায়, পৈতে ধারণের মতো কিছু লৌকিক সংস্কার ব্যতীত তথাকথিত ধর্মের কোন কিছুই তিনি মানতেন না। অনেকে এমনকি তাকে নাস্তিক আর অজ্ঞেয়বাদীও বলেছেন। বিধবা বিবাহ যা কিনা তার ‘সর্বপ্রধান সৎকর্ম’ বলে তাঁর নিজেরই মনে হত, তা করতে যেয়ে ধর্মের অপব্যবহারের জায়গাটাকে তো খোলসা করে দিলেনই; সেই সঙ্গে ধর্ম আর লোকাচারের আচলায়তনটাকে দিলেন এক জোরালো ধাক্কা। এমনকি তুলনামূলক লিবারেল ব্ৰহ্মধর্ম, যা তখন বঙ্গীয় পাশ্চাত্য শিক্ষিত কলকাতার এক নতুন ও নরম ফ্যাশান, তার সঙ্গে সেরকম দহরম-মহরমও তাঁর দেখলাম না; বরং তত্ত্ববোধীনী পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছেড়ে দিলেন,দেবেন্দ্রনাথের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে অনেকটা একই কারণে অক্ষয়কুমার দত্তও সরে এসেছিলেন তত্ত্ববোধিনীর সম্পাদকের পদ থেকে এবং বিদ্যাসাগর অক্ষয়বাবুর সমর্থনে এসে দাঁড়ান। প্রসঙ্গত একটু শিক্ষা সংস্কারের দিকে ঘুরে তাকাই, সংস্কৃত কলেজের শিক্ষানীতি নিয়ে ব্যালেন্টাইনের সঙ্গে মতদ্বৈধতার সময় বিদ্যাসাগর সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন সাংখ্য ও বেদান্ত ভ্রান্ত দর্শন এবং বার্কলে উদ্ভ্রান্ত দার্শনিক। উল্লেখ্য বার্কলে নিউটনের মধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের বিরোধী ছিলেন, এই বিজ্ঞানমনস্কতাও বিদ্যাসাগরের কাছ থেকে আমাদের একটা বড় পাওনা বেদান্তকে ভ্রান্ত দর্শন বলে বিদ্যাসাগর আমাদের ছাত্র পাঠ্যসূচীকেই শুধু যুগোপযোগী করলেন না, সেই সঙ্গে ব্রাহ্ম মতবাদ, যার ভিত্তিটাই হল বেদান্ত তাকেও ফুৎকারে ওড়ালেন; সময়টা নজর করুন, রামমোহন আর তাঁর ব্রাহ্মধর্ম ও অনুগামীরা তখন নাগরীক বাঙলার মধ্যগগনে দেদীপ্যমান পূর্ণ গরিমায়এই মধ্যশ্রেণীর নেতৃত্বে যে নতুন রাজনৈতিক চেতনা দানা বাধছিল, যা উচ্চকোটির ভদ্রলোক হয়ে ওঠার একটা সোপান বলে বিবেচিত হত, বিদ্যাসাগর তার থেকেও সমান দূরত্ব রাখলেনসমকালীন বৃটিশ ইন্ডিয়ান এ্যাসোশিয়েসন, ইন্ডিয়ান এ্যাসোশিয়েসন বা জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি কোন সম্পর্ক রাখেননি। অথচ নবগঠিত জাতীয়তাবাদের পদধ্বনী শুনতে তাঁর ভুল হয়নি, নিজের প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটান কলেজে রাজরোষে পড়া জাতীয়তাবাদী সুরেন্দ্রনাথকে শিক্ষকতায় নিযুক্ত করার হিম্মত কিন্তু তিনি হেলায় দেখিয়েছিলেন এই কলেজে সুরেন্দ্রনাথ ছাত্রদের মধ্যে নির্দ্বিধায় জাতীয়তাবাদ প্রচার করতেন, তার প্রমাণ পাই এখানের এক বিশিষ্ট ছাত্র বিপ্লবী ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের লেখায় “...আমি বিদ্যাসাগরের কলেজে এফ.এ. ক্লাসে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। সুরেন বাড়ুজ্যের লেকচার শুনিয়া দেশের ভাবনা ভাবিতে শিখিয়াছি। ...সুরেন বাড়ুজ্যে তাঁহার লেকচারে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করিতেন: তোমাদের মধ্যে ম্যাটসিনী গ্যারিবন্ডি কে হবে?...(১১) তখন ভদ্র শ্রেণীর বিনিয়োগের একটা ক্ষেত্রই ছিল ভূমি, আগেই বলা হয়েছে, বিদ্যাসাগর উচ্চ সরকারী আয় বা নিজের পুস্তক ব্যবসার কারণে যথেষ্ট বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও জমিতে অর্থ বিনিয়াগ করে ভূস্বামী শ্রেণীর অংশ হয়ে উঠতেও চাননি। ব্যবসা করার বিষয়টিও একজন চাকুরী জীবির পক্ষে বেশ অমানানসই, খুব সম্ভবত চাকুরীর ওপর সর্বৈব নির্ভরতা কমানোর উদ্দেশ্যে তিনি কোন একটা স্বাধীন পেশার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর সামাজিক প্রকল্পগুলির সাফল্যর জন্যে দরকার ছিল রোজগারের বিকল্প রাস্তা খুলে রাখা বিষয় জ্ঞান যে তার ছিল, এর প্রমাণ তো সর্বত্র ছড়িয়ে আছে, কিন্তু এই বৈষয়িকতা আবার কোনমতেই আত্মকেন্দ্রীক নয়, সবটাই প্রায় পরহিতব্রত বিধবা বিবাহের বিপুল ব্যয়ভার অথবা মেয়েদের বিদ্যালয়গুলিতে সরকারী অননুমোদন সত্ত্বেও সেগুলি বেশ কিছুকাল চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার আর্থিক দায় বহন করা সম্ভব হয়েছিল, এই বিত্তের জোরেইরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তাঁর সংস্রব না রাখার একটা কারণ এমনও হতে পারে তিনি চেয়েছিলেন সামাজিক সংস্কারের কাজগুলিতে সরকারকে পক্ষ করতে, কারণ সরকারী সহায়তা বা প্রতাপ সমাজ আন্দোলনের হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করলে সমাজকে মানাতে পারার সুবিধা হবে, এই রকম একটা সমীকরণ তাঁর মাথায় ছিল। শিক্ষা সংস্কার বা বিধবা বিবাহ আইন পাশ ও তার প্রয়োগে সরকারকে সুকৌশলে ব্যবহার যে সুফলপ্রদ হয়েছিল, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে নাতিনি স্পষ্টতই জানতেন সমাজ শুধু যুক্তি অথবা নিছক শাস্ত্রের দোহাই শুনবে না, মানবে নাএকটা শক্তিশালী কতৃত্ব থাকতে হবে, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে সমাজকে সহমতে আনার জন্য। আরও কথা হল, মানুষটি দারুণ কৌশলীও তো বটেন, সামাজিক প্রকল্পগুলির সাফল্যর জন্যে এই যে শাস্ত্রের দোহাই পাড়া, সরকারকে দিয়ে আইনের অনুকুলে কাজ করানো অথবা রাজনীতির সঙ্গে, ধর্মের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব রাখা; শিক্ষা সংস্কারের সময় পাশ্চাত্য ও দেশীয় ঐতিহ্যের মিশেল দেওয়ার নিপুণ প্রচেষ্টা, অথবা শিক্ষার জনমুখী প্রস্তাবনায় ধীরে চলো নীতির প্রয়োগ--- এই সব কৌশল বাস্তববাদীতারই একটা অন্য নাম ! অমলেশ ত্রিপাঠী যথার্থই বলেছেন, “...দেশীয় ঐতিহ্য প্রয়োগ বিদ্যাসাগরের অসাধারণ বিচক্ষণতা ও কৌশলের নিদর্শন, শুধু হৃদয়াবেগের উচ্ছাস নয়।(১২)অনুরাধা রায় অবশ্য মনে করেন, বিদ্যাসাগরের সব সমঝোতা বোধহয় কৌশল নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এটার সঙ্গে জড়িত ছিল কিছু অর্ন্তবিরোধও, প্রসঙ্গত তিনি তাঁর পারিবারিক টানাপোড়েনের কথা বলেছেন, তাঁর তীব্র সংস্কারগুলি কোনমতেই তাঁর মা-বাবাকে অখুশী করুক এমনটা তিনি চাইতেন না (১৩) কথিত আছে তাঁর পিতার আপত্তির জন্যই নাকি নিজের স্ত্রী-কন্যাদের লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করেননি। পিতার সন্মতি না পেলে যে তিনি বিধবা বিবাহে উদ্যেগী হবেন না, সে কথাও তিনি জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন। আর শেষ বয়সে পুত্রের সঙ্গে তাঁর অশান্তির কথা তো সর্বজনবিদিত।

যে কোন যুগেরই কিছু যুগ লক্ষণ থাকে উনবিংশ শতকটি বঙ্গীয় রেঁনেশার সময়; এর বিশিষ্টতার মধ্যে ছিল, একটি যুক্তিবাদী মানসিকতার দৃষ্টিকোন থেকে জীবন, সংস্কার ও সমাজের নানাবিধ মাপদন্ডগুলিকে যাঁচাই করে নেওয়া, যদিও এটা নিরঙ্কুশ ছিল তা বলা যাবে না বরং এর সীমাবদ্ধতারও কোন সীমা-পরিসীমা ছিল না ! নবজাগরণের ধারণাটির সঙ্গে এসবের সূত্রে একটা প্রগতিশীলতার আখ্যান জড়িত থাকে; যা মূলত প্রতিবিন্বিত হয়, সমকালের কর্ম প্রেরণা ও কর্ম উদ্দীপনায় এবং সৃষ্টিশীল চিন্তাচেতনায় ইওরোপের বিখ্যাত ইটালীয় রেঁনেশা এই প্রগতিশীলতারই জয়গান গেয়েছিল বাংলার রেঁনেশা সব অর্থে ইটালীর সঙ্গে তুলনীয় না হলেও, কিছু সাদৃশ্যযুক্ত অবশ্যই রেঁনেশা বা নবজাগরণ যে কর্ম প্রেরণা ও উদ্দীপনার কথা বলে, তা বাঙলাতে বাঙময় হয়েছিল যে দু-একজনের মাধ্যমে, তার মধ্যে একজন নিঃসন্দেহে বিদ্যাসাগরবস্তুত চিন্তাচেতনার স্তরে নবজাগরণের যে বিকাশ, যা আধ্যাত্মিকতা, দর্শন চর্চা ইত্যাদির মধ্যে বিকশিত হয়, তার সঙ্গে বোধ হয় একমাত্র বিদ্যাসাগরই কোন সংস্রব রাখেননি। বঙ্কিম, বিবেকানন্দ দেবেন্দ্রনাথ, রামমোহন এদের নবজাগরণীয় কার্যকলাপ মূলত দুটি ধারায় প্রবাহিত, একদিকে আধ্যাত্ম ও দর্শন চিন্তা, অন্যদিকে কর্ম উদ্দীপনাএদের গরিষ্ঠই কিন্তু বাধা পড়লেন চিন্তা ও তাঁর অনুশীলনে, রামমোহন দুয়ের মধ্যে একটা সাযুজ্য করার চেষ্টা করলেন বটে, কিন্তু কার্যত তাঁর দার্শনিক পরিচয় বড় হয়ে উঠলো--- শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্ম ধর্ম ও একেশ্বরবাদের প্রচার ও প্রসার তাঁর কর্ম উদ্দীপনার প্রায় সবটাকেই গিলে খেলোবিবেকানন্দের মধ্যে দুটির জোয়ারের সম্ভাবনাই প্রবল ভাবে ছিল, কিন্তু অকালমৃত্যু তাঁকে পরিসীমিত করে দিলো--- রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজ, কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁর একমাত্র কাজও বটে হিন্দু ধর্মের পুর্নজাগরণের সঙ্গে দরিদ্র-চন্ডাল, মূর্খ ভারতবাসীর লৌকিক ও পরমার্থিক উন্নতির যে স্বপ্ন তিনি লালন করতেন, তার পথ নিদের্শনা রয়ে গেল তাঁর বক্তৃতা ও রচনায় এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কার্যসূচীর মধ্যেঅকালমৃত্যু তাঁকে ছিনিয়ে না নিলে তিনিই যে বঙ্গীয় রেঁনেশার সফলতম কারিগর হতেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ কমমনে রাখবো তিনিই সেকালের প্রথম ভারতীয় চিন্তানায়ক যিনি শুদ্র জাগরণের কথা বললেন , এদের নতুন ভারত গড়ার আবশ্যকীয় উপাদান বলে মানলেনযাইহোক বঙ্গ রেঁনেশার এই সমস্ত কিছু ভালো-মন্দের মধ্যে সবচাইতে যেটা নজর কাড়ে, তা হল ধর্মের ওপর এক অতিরিক্ত নির্ভরতা, সেটা কিছুটা কালের বা যুগের ধর্মও বটে রমাকান্ত চক্রবর্তী শ্লেষের সঙ্গে বলেছেন, “ধর্মচিন্তার আধিক্যে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ক্রমশ বঙ্গ সংস্কৃতি বক্র হয়ে যেতে থাকে। যতো চিন্তা, প্রায় সবই ধর্ম নিয়ে। ...কবিতায় ধর্ম, নাটক-নভেলে ধর্ম, গানে ধর্ম, এমনকি খবরের কাগজেও ধর্মদেশাভিমানও সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয় ...রাজনৈতিক সভা সমিতিতেও ধর্মীয় নেতাদের দেখা যাচ্ছিল(১৪)ঠিক এখানটাতে বিদ্যাসাগর আঁধার রাতের একলা পথিকআগেই বলা হয়েছে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর নিস্পৃহতার কথাপ্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি কাজটাকেই গুরুত্ব দিয়েছেনবিধবা বিবাহের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় ধর্ম শাস্ত্রের দোহাই পেড়েছেন ঠিকই কিন্তু ঐ পর্যন্তই ! পাঠ্য তালিকাতে এমনকি বেদান্তের অন্তর্ভুক্তি কতটা জরুরী, হেলায় সেই প্রশ্ন তুলে ধরার সৎ সাহসও তাঁর কালে বাঙালীদের মধ্যে আর কেউ দেখাননিআর ধরতে চেয়েছেন একেবারে সমস্যার মূলের শেকড়টা-- শিক্ষার অভাব আর সমাজ-পরিবারে একতরফা গড়ে ওঠা বিধবাবিবাহ, বাল্যবিবাহ বা বহুবিবাহের মতো শাস্ত্রনির্ভর অসাম্যগুলিকে, অনাচারগুলিকেএই জন্যই উনিশ শতকের চিন্তানায়করা যখন একই সঙ্গে উদ্যোগী হচ্ছেন বহুবিধ সংস্কারে, যার ফলে হচ্ছে মান রাখি না কুল রাখিজাতীয় সমস্যা অথবা অধিক সন্নাসী তে গাজন নষ্টর মতো পরিস্থিতিসেখানে বিদ্যাসাগর স্থিত থাকেন শিক্ষা আর নারীদের সমাজিক মানোন্নয়নের প্রকল্পেআবার সেকালে নিছক বঙ্গীয় নাক উঁচু সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের মানসে সারা ভারতের সমস্ত কিছু কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু কলকাতা ছেড়ে চলে যাবার সৎসাহস সেকালে বা একালে বিদ্যাসাগরের মতো আর কেউ দেখানোর সাহস পায়নি। এক প্রবল আত্মবিশ্বাস, যা এক সদর্থক অহংকারও বটে, আমি মূর্তিমান সংস্কার, কলকাতা আমার সংস্কারের ধারণভূমি হবে; এমত কোন বাধ্যবাধকতার আমি পরোয়া করি না আমি মূৰ্ত্তিমান সংস্কার, চাইলে কর্মাটাড়ের হতদরিদ্র সাঁওতাল পল্লীর আধারে আমি নিজেই জ্বালবো সংস্কারের দীপ। তার মধ্যে থাকবে না কোন তথাকথিত তত্ত্বের কচকচানী, উঠবে না এর জনমুখীনতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন, থাকবে না কোন রাষ্ট্রীয় বা ধর্মীয় সংস্রব ! মূলে ফিরে যাওয়ার, ঐতিহ্যে ফিরে যাওয়ার একটা আর্তি তাঁর মধ্যে দেখি শিকড়টাকে উৎপাটন করে নয়, তাকে প্রয়োজনীয় জলসিঞ্চন করেও আধুনিকতার ধ্বজা তুলে ধরা যায়, তার একটা প্রচেষ্টা প্রথমবার বিদ্যাসাগর দেখালেন, তার অনেকানেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটা স্পষ্টতই এক ধরণের আধুনিকতাপরবর্তীতে গান্ধী আর রবীন্দ্রনাথ এই ধরণটাকে লালন করেছিলেন ঐতিহ্যের পক্ষপুটে তাদের আধুনিক ধরণের স্বদেশ ভাবনা ও প্রয়োগের কর্মসূচীতে, অবশ্যই আরও অনেকটা গুছিয়ে; পরিশীলিত ও পরিকল্পিত ভাবে

সূত্র নির্দেশ :
১) অনুরাধা রায়, “বিদ্যাসাগরের আয়নায় বাঙালী”, আরেক রকম, সম্পাদনা: শুভ্রনীল চৌধুরী, সপ্তম বর্ষ, ত্রয়োদশ সংখ্যা, ১--১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, কলকাতা, পৃ: ১৪-২৪ (পৃ: ৪, খসড়া লেখা)
২) প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্য, বিদ্যাসাগর এবং বেসরকারি সমাজ, সংস্কৃতি বিষয়ক যোগসূত্র, জুলাই-সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩, পৃ: ১৫ (উদ্ধৃত) রমাকান্ত চক্রবর্তী, “তিন সংস্কারক”, উনিশ শতকের বাঙালীজীবন ও সংস্কৃতি, সম্পাদনা: স্বপন বসু ও ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী, নম্ভেবর, ২০০৩, কলকাতা, পৃ: ১৬৯।
৩) বদরুদ্দীন উমর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ, প্রথম ভারতীয় সংস্করণের তৃতীয় মুদ্রণ, এপ্রিল, ১৯৮৮, কলকাতা, পৃ: ৪০।
৪) ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যেপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর, সাহিত্য সাধক চরিতমালা-- ১৮, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, ষষ্ঠ সংস্করণ, ১৩৭৫, কলিকাতা, পৃ: ৩৭-৩৮।
৫) বদরুদ্দীন উমর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ, প্রথম ভারতীয় সংস্করণের তৃতীয় মুদ্রণ, এপ্রিল, ১৯৮৮, কলকাতা পৃ: ৪৪-৪৬
৬) অমলেশ ত্রিপাঠী, ইতালীর রেনেশাঁস বাঙালীর সংস্কৃতি, জানুয়ারী, ১৯৯৪, কলকাতা পৃ: ৫৭।
৭) বদরুদ্দীন উমর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ, প্রথম ভারতীয় সংস্করণের তৃতীয় মুদ্রণ, এপ্রিল, ১৯৮৮, কলকাতা, পৃ: ৫৬।
৮) অমলেশ ত্রিপাঠী, ইতালীর রেনেশাঁস বাঙালীর সংস্কৃতি, জানুয়ারী, ১৯৯৪, কলকাতা, পৃ: ৫৮।
৯) অনুরাধা রায়, “বিদ্যাসাগরের আয়নায় বাঙালী”, আরেক রকম, সম্পাদনা: শুভ্রনীল চৌধুরী, সপ্তম বর্ষ, ত্রয়োদশ সংখ্যা, ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, পৃ: ১৪-২৪ (পৃ: ৭, খসড়া লেখা)।
১০) চন্ডীচরণ বন্দ্যেপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর, ১৩৭৬, কলকাতা, পৃ: ৪৬৫।
১১) যোগেশচন্দ্র বাগল, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, সাহিত্য সাধক চরিতমালা— ১০০, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, ১৩৭১, কলকাতা, পৃ: ১০-১১।
১২) অমলেশ ত্রিপাঠী, ইতালীর রেনেশাঁস বাঙালীর সংস্কৃতি, জানুয়ারী, ১৯৯৪, কলকাতা, পৃ: ৫৮।
১৩) অনুরাধা রায়, “বিদ্যাসাগরের আয়নায় বাঙালী”, আরেক রকম, সম্পাদনা: শুভ্রনীল চৌধুরী, সপ্তম বর্ষ, ত্রয়োদশ সংখ্যা, ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, পৃ: ১৪-২৪ (পৃ: ১৩, খসড়া লেখা)।
১৪) রমাকান্ত চক্রবত্তী, “তিন সংস্কারক”, উনিশ শতকের বাঙালীজীবন ও সংস্কৃতি, সম্পাদনা: স্বপন বসু ও ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী, নম্ভেবর, ২০০৩, কলকাতা, পৃ: ১৮৬


*ছবি গুগল থেকে সংগৃহীত।





No comments:

Post a Comment

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com